জামাতের নামাজে যে সুন্নতের বরখেলাফ আমরা করি
আমরা অনেকে মসজিদে নামাজ পড়তে গিয়ে কতগুলো সাধারণ ভুল করে থাকি। অনেক আগে থেকে দেখে আসছি এই সাধারণ ভুলগুলো।
দীর্ঘদিন
ধরে যারা নামাজ পড়েন তাদেরও অনেকে অবলীলায় এ ভুল করে থাকেন। ভুল করতে করতে
এমন অবস্থা হয়েছে যে এখন এ ভুলগুলোই তাদের কাছে নিয়মে পরিণত হয়েছে।
যদিও এগুলো শোধরানো সংশ্লিষ্ট ঈমামের দায়িত্ব। এই ভুলগুলো প্রতিটি সরাসরি আল্লাহর রাসুল (সা.) এর সুন্নতের খেলাফ।
যেমন:
দৃশ্য-১
ছেলে
বুড়ো যে কেউই নামাজের জন্য মসজিদে যাচ্ছেন। ঘড়ি দেখলেন সময় হয়ে গেছে, তা
ছাড়া দূর থেকেও দেখা যাচ্ছে জামাত দাঁড়িয়ে গেছে। জামাতে নামাজ পড়তে হবে তাই
দ্রুত হাঁটা শুরু, কোনো কোনো ক্ষেত্রে দ্রুত হাঁটা দৌড়ের কাছাকাছি বা দৌড়
দিয়েও অনেকে নামাজে পৌঁছেই হাঁপাতে হাঁপাতে কাতারে দাঁড়িয়ে যান। এই হাঁপানো
অবস্থাতেই এক রাকাতের মতো চলে যায়। এটা আল্লাহর রাসুল (সা.) পছন্দ করেননি।
তিনি নিষেধ করেছেন। আপনি হয় সময় নিয়ে নামাজ পড়তে যাবেন অথবা ধিরস্থির ও
শান্তভাবে হেঁটে গিয়ে যতটুকু জামাতে শরীক হতে পারেন হবেন এবং বাকি নামাজ
নিজে শেষ করবেন। হযরত আবু কাতাদা (র.) বর্ণনা করেছেন,একবার আমরা নবী (সা.)
এর সঙ্গে নামাজ পড়ছিলাম, নামাজরত অবস্থায় তিনি লোকের ছুটাছুটির শব্দ অনুভব
করলেন।
নামাজা শেষে জিজ্ঞেস করলেন তোমরা কি করছিলে? তারা আরজ
করলেন, ‘‘আমরা নামাজের জন্য তাড়াতাড়ি আসছিলাম। আল্লাহর রাসুল (সা.) বললেন,
এরূপ কখনো করোনা। শান্তিশৃঙ্খলা ও ধীর স্থিরভাবে নামাজের জন্য আসবে,তাতে যে
কয় রাকাত ইমামের সঙ্গে পাবে পড়ে নেবে, আর যা ছুটে যায় তা ইমামের নামাজের
পর পুরা করে নেবে। (বোখারি শরীফ,খণ্ড-১,হাদিস নম্বর- ৩৮৭)
এই
হাদিসে রাসুল (সা.) নামাজে আসার এবং নামাজে শামিল হওয়ার সুনির্দিষ্ট নিয়ম
বলে দিয়েছেন যে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রেখে ধিরস্থিরভাবে হেঁটে মসজিদে আসতে
হবে, কোনো তাড়াহুড়া করা যাবে না। মহান আল্লাহ্ আমাদের কৃত পূর্বের অজ্ঞতার
জন্য ক্ষমা করুণ। আমীন।
দৃশ্য-২
ফজরের নামাজের সময় হয়ে
গেছে। একামত হয়ে গেছে, ইমাম দাঁড়িয়ে নামাজ শুরু করে দিয়েছেন। দ্রুত ঘর থেকে
বের হয়ে যথারীতি নামাজের জন্য দ্রুত হাঁটা অথবা ভিড়ের মধ্যে হুড়োহুড়ি করে
হাঁটা অথবা দৌড় দিয়ে মসজিদে পৌঁছা। কিন্তু এবার সরাসরি জামাতে শামিল নয়।
কারণ ফজরের ফরজের আগে সুন্নত রয়েছে। হড়বড় করে রুকু সেজদা সংক্ষিপ্ত করে
সুন্নত শেষ করে তারপর ফরজ জামাতে ইমামের সঙ্গে দাঁড়াতে হবে। ততোক্ষণে দেখা
যায়, কেউ জামাতের হয় এক রাকাত পান বা শেষ রাকাতে বৈঠকে জামাতে শামিল হন।
ফজরের জামাতের আগে এমন চিত্র হরহামেশাই দেখা যায়। কিন্তু আল্লাহর রাসুলের
(সা.) হাদিসে এর সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা রয়েছে এবং এটাই মান্য।
যদি
কেউ ফজরের জামাতের আগে মসজিদে যেতে পারেন তাহলে প্রথমে সুন্নত দুই রাকাত
পড়ে জামাতের জন্য অপেক্ষা করবেন। আর যদি দেরি হয়েই যায় এবং জামাত শুরু হয়ে
যায় তাহলে প্রথমে মসজিদে গিয়ে ইমামের সঙ্গে জামাতে শামিল হতে হবে এবং
জামাতের পর বাকি নামাজ (যদি থাকে) শেষ করতে হবে।
মোনাজাত করে
অপেক্ষা করবেন সূর্য উদয়ের জন্য এবং সূর্য উদয়ের পর নামাজের নিষিদ্ধ সময়
(সাধারণত সূর্য উদয়ের পর ২০ মিনিট) পার হওয়ার পর আপনি ফজরের সুন্নত নামাজ
আদায় করবেন। মধ্যবর্তী যে সময় সে সময় আপনি হয় মসজিদে বসে অপেক্ষা করতে
পারেন অথবা ঘরেও ফিরে আসতে পারেন এবং সময় হওয়ার পরই আপনি ফজরের সুন্নত আদায়
করে নেবেন। এটাই আল্লাহর রাসুল (সা.) নির্দেশিত নিয়ম। কিন্তু আমরা কয়জন
সেটা করি? হযরত আবু হোরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, ‘‘যে
ব্যক্তি ফজরের দুই রাকাত সুন্নত ফরজের পূর্বে পড়তে পারেনি সে সূর্য ওঠার পর
তা পড়বে। তিরমিজি ১ম খণ্ড,হাদিস নম্বর-৩৯৮।
আব্দুল্লাহ ইবনে
বোহায়না (রা.) বর্ণনা করেছেন, ‘‘একদিন আল্লাহর রাসুল (সা.) ফজরের নামাজের
একামত হলে এক ব্যক্তিকে ভিন্ন নামাজ পড়তে দেখলেন। (ওই ব্যক্তি ফজরের দুই
রাকাত সুন্নত পড়ছিলেন)। নামাজ শেষে যখন সবাই রাসুল (সা.) এর নিকটবর্তী হয়ে
ঘিরে বসলো,তখন নবী (সা.) ওই ব্যক্তিকে বললেন, ‘‘ফজরের ফরজ নামাজ কি চার
রাকাত হয়? অর্থাৎ একামতের পর ফরজ নামাজ ভিন্ন অন্য নামাজ পড়া যায় না, তুমি
ভিন্নভাবে দুই রাকাত ও জামাতে দুই রাকাত পড়েছ, তুমি কি ফরজ চার রাকাত পড়লে?
(বোখারি শরীফ,খণ্ড-১, হাদিস নম্বর-৪০২)।
আশা করি উপরোক্ত হাদিসগুলো না জানার কারণে এতোদিন যা যা ভুল করেছি তা শুধরে নিতে পারবো। (চলবে)
Collected By : Khan Rajib Hossain
No comments:
Post a Comment